Looking For Anything Specific?

ads header

"চাঁদের মালিকানা কে নিবে?" চাঁদের মালিকানা নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ(পর্ব-০৩)


চাঁদ কি কারো বাপের সম্পদ, যে চাঁদের মাটি সে বিক্রি করবে? বন্ধুরা, প্রশ্নটা শুনেই কেমন গাঁ হিম হিম করছে, তাই না? চাঁদ তো কারো একার সম্পদ হতে পারে না। কিন্তু পৃথিবীতে অসাধু ব্যাবসায়িরা সেই চাঁদকে নিজের সম্পত্তি মনে করে। শুধু মনেই করে না, বরং; চাঁদের মাটিও তারা বিক্রয় করতে শুরু করেছে। আজকের এই পর্বে চাঁদের মাটি বিক্রয় করা যাবে কিনা? কেনা যাবে কি না? কিনলেও সে মাটি ভবিষ্যতে তাদের নামে থাকবে কি না? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরসহ চাঁদের মাটি বিক্রয় করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

চাঁদ, একটি সৌন্দর্যে ভরা রুপক! ছোটদের আনন্দের প্রতীক! কবিদের কাব্য রচনায় অনুপ্রেরক! ভালোবাসার একটি সুন্দর নিদর্শন! আরও কত কি!

সবচেয়ে বড় কথা, এই চাঁদ আমাদের পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। ছোটবেলায় গল্প শুনেছিলাম, চাঁদে বুড়ি থাকে, যে সেখানে বসে চরকায় সুতা কাটে। তো ছোটদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, চাঁদের মালিক কে? তারা বলবে চাঁদের বুড়ি।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। চাঁদে কেউ থাকে না। ফলে চাঁদের মালিকানা কেউই নয়। কিন্তু ইদানিং অনেকেই চাঁদে জমি কেনার কথা ভাবছেন। চাঁদে কে জমি বিক্রয় করছে? কে জমি কিনছে? কিভাবে বিক্রয় হচ্ছে? জানতে চাইলে এর আগের ২ টি পর্ব পড়ে আসতে পারো। তোমাদের সুবিধার্থে আমি আগের ২ টি পর্বের লিংক নিচে দিয়ে দিচ্ছি।

১ম পর্ব    ২য় পর্ব

তাদের বলে রাখি যে, চাঁদে যারা মাটি কিনেছেন বা মাটি কিনতে চাচ্ছেন, তাদের মতো বোকা আর ২য় টি নেই।

এর কারণ কি? এর কারণ হলো জাতিসংঘের চুক্তি। এটা জানতে হলে আমাদের আজ থেকে প্রায় ৫৫ বছর আগে যেতে হবে।

১৯৬৭ সালের শুরুর দিকে। তারিখ ছিল ২৭শে জানুয়ারী। একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি পেশ করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। চুক্তিটি ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন সংক্রান্ত। নাম ছিল “দ্যা আউটার স্পেস ট্রিটি”। চুক্তিতে বলা হয়,

“পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে, সেগুলো কোনো দেশ দখল বা নিজেদের একক সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না।” ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত পৃথিবীর ১১১টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে। 

এই চুক্তিটিকে অনেকেই মহাকাশের ‘ম্যাগ্নাকার্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ, এই চুক্তির কারণেই চাঁদের বুকে কেউ পতাকা উড়িয়ে দিলেই সে চাঁদের ওই অংশের মালিকানা দাবি করতে পারবে না। ফলে চাঁদের মালিকও হতে পারবে না।

কিন্তু এই চুক্তিতে কিছু অসম্পূর্ণতা ছিল। এই চুক্তিতে “চাঁদের ভূমির উপর ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট অধিকার” নিয়ে কিছু বলা হয় নি। যার ফলে, আসলেই যদি কোনো ধনী ব্যাক্তি চাঁদের মাটি কিনতে চায়, তার বেলায় কি হবে, তা অস্পষ্ট থেকে যায়।

ফলে এই অসম্পূর্ণতাকে কাজে লাগিয়েই অনেক অসাধু ব্যাবসায়ি, চাঁদের মাটির মালিকানা দাবি করে এবং সে অনুযায়ী মাটিও বিক্রি করছে।

পরে ১৯৭৯ সালে “মুন এগ্রিমেন্ট” নামে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছে, “পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটিকে শুধু বিশ্ববাসীর শান্তির স্বার্থে ব্যাবহার করা যাবে এবং চাঁদে যদি কেউ কোনো স্টেশন স্থাপন করতে চায়, তাহলেও জাতিসংঘকে আগে জানাতে হবে। চাঁদ এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদের সাধারণ উত্তরাধিকার সমগ্র মানবজাতির। এবং কেউ যদি এসব সম্পদের অপব্যাবহার করে, তাহলে তা প্রতিহত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থা তৈরি করা হবে। চাঁদের কোনো খনিজ সম্পদের উত্তোলন এবং রক্ষণাবেক্ষণ একটি স্পেস নিয়ন্ত্রকের অধীনে হতে হবে এবং এ থেকে যা লাভ হবে, তার একটি অংশ তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দেওয়া হবে। চাঁদে যেকোনো প্রকার অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ।”

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র একটি আইন পাশ করে। নাম “কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ কম্পিটিটিভনেস অ্যাক্ট”। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন নাগরিকেরা মহাকাশের এমন যেকোনো কিছুর মালিকানা নিতে পারবে, যেখানে তারা পানি এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদের জন্য খননকার্য পরিচালনা করতে পারবে।

কিন্তু সব চুক্তির মতো এই চুক্তিরও কিছু দুর্বলতা আছে। এর দুর্বলতা হলো মাত্র ১১টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে। এদের মধ্যে ভারত ও ফ্রান্সও আছে। কিন্তু বড় বড় দেশগুলো এতে স্বাক্ষর করেনি। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ইত্যাদি দেশ

দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক চুক্তিতেই কিন্তু অসম্পূর্ণতা রয়েছে। এই অসম্পূর্ণতাকে কাজে লাগাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা নিজেদেরকে চাঁদের মাটির মালিকানাও দাবি করছে, এবং লাখ লাখ মানুষকে তা বিক্রি করছে। কিন্তু যারা কিনছে, তারা কি বুঝে না যে, চাঁদের মাটি কারো বাপের সম্পদ নয়। তাহলে এ সমস্ত তথ্য থেকে আমরা কি জানতে পারলাম? অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।

উপরের তথ্যগুলো থেকে আমরা এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে, চাঁদের মাটি কারো মালিকানার অন্তর্ভুক্ত নয়। যে চাঁদে জমি কিনবে, সে আসলে টাকা ফুরিয়ে বাতাস কিনছে। তার মতো বোকা কেউ নয়। তাই আমরা নিশ্চিন্তে বলতে পারি যে, চাঁদে জমি কেনা আইনত অবৈধ। কিন্তু তারপরও যারা কিনতে চায়, তারা কিনতে পারে। পয়সা বেশী হলে খরচ তো করবেই তারা। হোক সেটা কাজের, অথবা অকাজের।

ধন্যবাদ সকলকে।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো ও যুগান্তর

ইমেইজ ক্রেডিটঃ pexels.com & unsplash.com

ইমেইজ ডিজাইনঃ canva.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ