Looking For Anything Specific?

ads header

"চাঁদে জমি কিনলাম" সত্যিই কি চাঁদে জমি কেনা যায়?(পর্ব-০১)


“চাঁদে মাটি কিনলাম? এই মাটির দলিলও পেয়েছি। কিনেছি ডেনিস হোপের ওয়েবসাইট লুনারএমবাসি ডটকম থেকে। মাটির দাম পড়েছে ৪৫ ডলার।” এমনই চাঞ্চল্যকর খবর জানা গেছে এই বছরেরই ২৩শে সেপ্টেম্বর এমডি অসীম এর মুখ থেকে। ওই ব্যাক্তি দাবি করেন যে, তিনি চাঁদে মাটি কিনেছেন। চল জেনে নিই তাঁর মুখ থেকে শুনা কথাগুলো।

এমডি অসীম বাংলাদেশের অধিবাসী। তিনি থাকেন খুলনা শহরে। খুলনা নগরের মডার্ন মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ি। তিনি ২০১৫ সালে বিয়ে করেন। তারিখ ২৩শে সেপ্টেম্বর। তাঁর স্ত্রীর নাম ইসরাত টুম্পা। বর্তমানে তাদের একটি পুত্রসন্তান আছে। পুত্রের বয়স চার বছর। এমডি অসীম বলেন, বিবাহবার্ষিকীতে বউকে কিছু দামি জিনিস উপহার দেওয়া, যা অনেক মানুষের কাছেই নেই, তাঁর অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল। গতবছর তিনি জানতে পারেন যে, ভারতের এক ব্যাক্তি তাঁর বিবাহবার্ষিকীতে তাঁর বউকে চাঁদের মাটি কিনে দিয়েছেন। এরপরে তিনিও সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি তাঁর বউকে চাঁদের মাটি কিনে দিবেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ডেনিস হোপের ওয়েবসাইট লুনার এমবাসিতে চাঁদে জমি কেনার জন্য আবেদন করেন। তাঁর বিবাহবার্ষিকীর ৩ দিন আগে, ২০শে সেপ্টেম্বর তিনি চাঁদের কেনা জমির কাগজ ই-মেইলের মাধ্যমে পান। এর সাথে আরও পান, জমির বিক্রয় চুক্তিনামা, কেনা জমির একটি স্যাটেলাইট ছবি, জমিটির ভৌগোলিক অবস্থান এবং মৌজা-পর্চার মতো আইনি নথিও।

তাঁর স্ত্রীও এই জমি পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা।

অসীম-টুম্পার এই ভালোবাসা, বন্ধন হয়তো অনেক গভীর। তাতে হয়তো কোনো খাত নেই। হয়তো নেই কোনো প্রশ্ন।

কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে। চাঁদে কি সত্যিই মাটি কেনা যায়?

কেউ বলবে হ্যাঁ, কেউ বলবে না। চাঁদে সত্যিই জমির মালিকানা নেওয়া যায় কি-না, সেটার উত্তর তোমরা ২য় পর্বে পাবে। কিন্তু যদি জমি না কেনা যায়, তবে এই ব্যাক্তি কেমন করে চাঁদে জমি কিনলেন?

আসলে চাঁদে যিনি জমি বিক্রি করছেন, তাঁর নাম ডেনিস হোপ। এই বিষয়ের ২য় পর্বে আমরা দেখব যে, চাঁদের মালিকানা নিয়ে যেসব চুক্তিতে বিভিন্ন দেশের সরকার স্বাক্ষর করেছেন, তাতে কিছু অসম্পূর্ণতা ছিল। যারা ২য় পর্বটি পড়তে চাও, তারা আমাকে কমেন্ট করে জানাও। আমি খুব শীঘ্রই ২য় পর্ব নিয়ে আসব।

তো এই যে চুক্তির অসম্পূর্ণতা, এটি কাজে লাগাতে চেয়েছিল অনেক অসাধু ব্যাবসায়ি। ১৯৮০ সালে এই সুযোগটি ১ম কাজে লাগান ডেনিস হোপ। আমেরিকান আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি মালিকবিহীন সম্পদের মালিকানা দাবি করে এবং অন্য কোনো ব্যক্তি সেই সম্পদে দাবি না রাখে, আর দলিলে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে, তাহলে সেই ব্যাক্তি উক্ত সম্পদের মালিক হবে। হোপ খুবই চালাক। তিনি চাঁদের মালিকানার ডকুমেন্ট তৈরি করেন। এবং কৌশলে তা স্বাক্ষর করিয়ে নেন। যার ফলে নিয়ম অনুযায়ী চাঁদের মালিক হন তিনি। আর এর ফলেই চাঁদের জমি নির্দ্বিধায় বিক্রি করার সুযোগ পান। হোপের প্রতিষ্ঠানের নাম “লুনার এমবাসি কমিশন”।

আর এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ১মে যাদের নাম বললাম, এমডি অসীম আর তাঁর স্ত্রী ইসরাত টুম্পা ৪৫ ডলারে জমি কিনেছেন।

তারাই শুধু নয়, বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ চাঁদে জমি কিনেছেন। তো এই জমি হোপ ক্রেতাদের কি করে বিক্রি করেন? কতজনকে বিক্রি করেছেন? কারা কিনতে যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর না জানলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বুঝা যাবে না।

ডেনিস হোপের প্রতিষ্ঠান ঘাটাঘাটি করে আমরা যা তথ্য পেয়েছি, তা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে।

হোপ তাঁর ক্রেতাদেরকে পানির দামেই জমি বিক্রি করেন। প্রতি একর জমির দাম ২৪.৯৯ ডলার থেকে শুরু করে ৫০০ ডলার পর্যন্ত। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ ২০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত। যে আইনে তিনি এসব করছেন, সেই আমেরিকান আইন অনুযায়ী এটি বৈধ। এমনকি তিনি জমির দলিল, মৌজা-পর্চার মতো আইনি নথিও ক্রেতাদের দেন। যেহেতু চাঁদ কাছের কোনো বস্তু না, তাই চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাই দলিলের সঙ্গে ক্রেতাদের একটি মানচিত্রও দেন হোপ। যাতে ক্রেতারা বুঝতে পারে কোন জায়গার জমি তারা কিনল। ক্রেতারা তাঁর ওয়েবসাইট থেকে চাঁদে জমি কেনার আবেদন করতে পারে।

তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে আরও জানা যায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখেরও বেশী ক্রেতাকে তিনি তাঁর চাঁদের মাটি বিক্রয় করেছেন। আর মোট জমি বিক্রয় করেছেন ৬১.১ কোটি একর। তাঁর ক্রেতা কারা জানো?

তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ চাকুরীজীবী সবাই রয়েছে তাঁর ক্রেতাদের তালিকায়।

তো বন্ধুরা তোমরা কি জানতে চাও, কতজন তারকাকে তিনি জমি বিক্রয় করেছেন? কাকে সবচেয়ে বেশী জমি বিক্রয় করেছেন? আর এই চাঁদের জমি কি ভবিষ্যতেও ক্রেতাদের নামেই মালিকানা থাকবে? নাকি ক্রেতারা টাকা দিয়ে হাওয়া কিনছে?

এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এর ৩য় পর্বে আলোচনা করা হবে। আর ২য় পর্বে, উত্তর দেওয়া হবে যে, চাঁদে জমি কিনলে আসলেই তাঁর মালিক হওয়া যায় কিনা?

তো প্রশ্নের উত্তর পেতে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা কর।

ধন্যবাদ।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো

ইমেইজ ক্রেডিটঃ unsplash.com

ইমেইজ ডিজাইনঃ canva.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ