“হীরক রাজার দেশে” হীরা যেন উপচে পড়ে। তেমনই এক বিশাল বড় হীরার খনি হলো “মীর মাইন”। এই মীর মাইন অবস্থিত সাইবেরিয়ায়। এই মীর মাইন একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার খনি ছিল। এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে হীরা উত্তোলন করা হতো। আজকের এই পর্বে আমরা, মীর মাইন থেকে কত ক্যারেট হীরা উত্তোলন করা হয়েছে? মীর মাইন কতটা গভীর? এর চওড়া কতা? একে নো ফ্লাইং জোন হিসেবে কেন ঘোষণা করা হয়েছে? এসমস্ত প্রশ্নের উত্তরসহ মীর মাইন সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যের আলোচনা করা হবে।
প্রায় সমগ্র উত্তর এশিয়া নিয়ে গঠিত একটি বিস্তীর্ণ ভৌগোলিক শীতপ্রধান অঞ্চল হলো সাইবেরিয়া। সমগ্র সাইবেরিয়াকে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেলের ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সাইবেরিয়ারই একটি খনির উৎস হলো “মীর মাইন”,যেখানে প্রচুর পরিমাণে হীরা পাওয়া যেত। তো চল শুরু করি “মীর মাইন” নিয়ে আলোচনা।
“মীর মাইন” হলো পৃথিবীর সব থেকে বড় হীরার খনি। এই মীর মাইন সাইবেরিয়ায় অবস্থিত। এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ক্যারেট পরিমাণ হীরা উত্তোলন করা হতো। ফলে এখানে অনেক বড় গহ্বর তৈরি হত্র থাকে। হীরা উত্তোলন প্রতিবছর করা হতো। বন্ধুরা তোমরা কি জানো কত বছর আগে থেকে এখানে হীরা উত্তোলন করা হতো? আর কে সেই ব্যক্তি, যিনি এই খনির সন্ধান পান? সেটা জানতে হলে আমাদেরকে প্রায় ৬৭ বছর আগে যেতে হবে।
১৯৫৫ সাল। রুশ ভূবিজ্ঞানী, নাম তাঁর ইউরি খবরদিন। এই ইউরি এর নেতৃত্বে একটি দল এই হীরার খনির সন্ধান পান। এর ঠিক ২ বছর পর, অর্থাৎ, ১৯৫৭ সালে এখানে খনন কাজ শুরু হয়। এই মহা মূল্যবান খনি আবিষ্কারের জন্য ওই বছরই সর্বোচ্চ পুরস্কার পান এই ইউরি খবরদিন। পুরস্কারের নাম “লেলিন প্রাইজ”। আর এটা প্রদান করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফলে তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় পড়ে যায়।
তাঁর নেতৃত্বে তখন এখানে খনন কাজ শুরু হয়। এখান থেকে তারা প্রচুর পরিমাণে হীরা উত্তোলন করে। এভাবে হীরা উত্তোলন করতে করতে একসময় এখানকার সব হীরা শেষ হয়ে যায়। হীরা শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত এক গর্তে পরিণত হয় এই স্থানটি। এটা অনেক গভীর একটা গর্তের মতো তৈরি হয়। প্রায় ১৭২২ ফুট গভীর এই গর্তটি। আর চওড়াও অনেক। প্রায় ৩৯০০ ফুট চওড়া। কিন্তু বর্তমানে মীর মাইনের ওপর নো ফ্লাইং জোন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কেন?
সুরক্ষার কারণে বর্তমানে মীর মাইনের উপর নো ফ্লাইং জোন ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, এই গর্তের উপর দিয়ে যখন কোনো হেলিকপ্টার যায়, তখন সেই হেলিকপ্টারকে কোনো এক অজানা শক্তি নিচের দিকে টেনে ধরে। এর কারণ কি?
অনেকে এটাকে ভূমি দেবীর অভিশাপ বলে চিহ্নিত করে। কারণ, এখানে ভূমি তার মূল্যবান সম্পদ লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু মানুষ তা উত্তোলন করে। অনেকে আবার এটাকে ভুতুরে কাণ্ড বলে অভিহিত করে। তবে যে যাই বলুক, যে যাই ভাবুক না কেন, বিজ্ঞানীদের কাছে এর একটি সু-স্পষ্ট ধারণা আছে। চল জেনে নিই সেই বৈজ্ঞানিক মতামত।
মীর মাইন খুবই গভীর। এটি অনেক গভীর হওয়ার কারণে খনির নিচের বায়ু ভুঅভ্যন্তরের উষ্ণতার কারণে অনেক গরম হয়। ফলে বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে আসে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য উপরের বায়ু তখন নিচে নেমে যায়। বায়ুর এই উঠা-নামার কারণেই খনির উপরে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। তাই এই স্থানের উপর দিয়ে কোনো হেলিকপ্টার গেলে তা কিছুটা নেমে যায়।
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের এই পর্ব? এরকম হীরার খনি আমাদের দেশে থাকলে কেমন হতো? কমেন্ট করে জানিয়ে দিও।
ধন্যবাদ সকলকে।
0 মন্তব্যসমূহ