Looking For Anything Specific?

ads header

ভয়নিচ পাণ্ডুলিপির ইতিহাস!(ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি পর্ব-০২)


বন্ধুরা বিশ্বে অবাক করা ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি আজ পর্যন্ত কেউই পড়তে পারে নি। এই বইয়ের বর্ণমালাগুলো অজানা প্রকৃতির। এই বইটি কোন ভাষা দিয়ে লেখা হয়েছে, তা কেউই জানে না। ফলে আজ পর্যন্ত কেউই এই বইটির পাঠোদ্ধার করতে পারেনি। এর আগের পর্বে আমি এই বইয়ের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়েছি। তোমরা যারা আগের পর্বটি পড়নি, তারা অবশ্যই আগের পর্বটি পড়ে আসবে। তোমাদের সুবিধার্থে আমি আগের পর্বের লিংক নিচে দিয়ে দিচ্ছি।

ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি

আজকে আমরা জানব, এই বইয়ের ইতিহাস সম্পর্কে। অর্থাৎ, এই বইটি কীভাবে, কার কাছ থেকে কার কাছে এলো? এর মালিকানা কে পাবে? এর ভিতরে একটা রহস্যময় চিঠি লুকায়িত আছে, সেটা কি? এসকল প্রশ্ন সংক্রান্ত উত্তরসহ এই বইয়ের যাবতীয় ইতিহাস আজকে আলোচনা করা হবে। তো চল দেড়ি না করে শুরু করি আজকের পর্ব।

এর আগের পর্বে বলেছিলাম যে, ভয়নিচ এই বইয়ের ভিতরে একখানা রহস্যময় চিঠি পেয়েছিলেন। সেই চিঠিতে দেখা যায়, ১৬৬৫ সালে বিজ্ঞানী জোয়ানাস মার্কাস মার্সি এই চিঠি লিখেছিলেন। তিনি চিঠিসহ বইটি তাঁর বন্ধু আথানাসিয়াস কার্চারকে পাঠান। তাঁর বন্ধু থাকতো ইতালিতে। তিনি চিঠিতে তাঁর বন্ধুকে এই বইয়ের অর্থ বের করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এখন আমাদের মধ্যে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, জোয়ানাস মার্কাস মার্সি এই বইটি কোথায় পেলেন? কার কাছে থেকে পেলেন?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য গবেষকরা অনেক গবেষণা করেন। গবেষণা শেষে তাঁদের ব্যাখ্যাও প্রদান করেন। এসব ব্যাখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য এবং সবচেয়ে বেশী সমর্থিত ব্যাখ্যাটি আমি তোমাদের সামনে তুলে ধরছি।

এর আগের পর্বে বলেছি, এই বইটি ১৪০০ সালে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গবেষকরা গবেষণা করেও জানতে পারেন নি যে, এই বইটি তৈরি হওয়ার পর ২০০ বছর সময়কালের মধ্যে কার মালিকানাধীন ছিল। কিন্তু ইতিহাসবিদরা ১৫৭৬ সালের পর থেকে এই বইয়ের মালিকানা কীভাবে কার থেকে কে পেয়েছে তা সঠিকভাবে অনেকটা বলতে পেরেছে। তো চল জেনে নিই। 

১৫৭৬ সাল থেকে ১৬১১ সাল পর্যন্ত রাজা দ্বিতীয় রুডলফের শাসনকাল ছিল। তখন তাঁর সভায় এই বইটি ছিল। সম্ভবত জন ডি নামক এক ব্যক্তি ওই বইটি রাজার দরবারে প্রদর্শন করেছিলেন। তারপর বইটির মালিকানা বদল হয়ে যায়। But এরপর মালিকানা কে পেয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। হয়তো রাজার কোনো সভা সদস্য বইটি নিজের সংগ্রহে রেখেছিলেন।

এরপর অনেক বছর কেটে যায়। বইটির স্থান হয় তখন জর্জ বারেশের লাইব্রেরিতে। জর্জ বারেশ ছিলেন পাগলাটে রসায়নবিদ। তিনি কীভাবে বইটি পেলেন, তা কেউ জানে না। এই বারেশ বইটির রহস্যভেদ করার জন্য অনেক গবেষণা করেন। But unfortunately তিনি এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। সেই সময়ে আথানাসিয়াস কার্চার কিছু দুর্বোধ্য হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তাই বারেশ তখন বইটির কিছু অংশ কার্চারকে প্রেরণ করেন। কিন্তু কার্চার সমাধান দেওয়ার আগেই বারেশ মারা যান।

বারেশ এর অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জোয়ানাস। বারেশের মৃত্যুর পর তাই বইটির মালিকানা চলে আসে জোয়ানাস মার্সির হাতে। কিন্তু বারেশ উইল করে গেছেন যে, এই বইটি যেন কার্চারের কাছে দেওয়া হয়। তাই মার্সি এই বইটি কার্চার এর কাছে প্রেরণ করেন। সাথে তিনি একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে কার্চারকে বলেন, যেন কার্চার এই বইয়ের রহস্য উদ্ঘাটন করে। কিন্তু কার্চার কোনো আশানুরূপ উত্তর দিতে পারেন নি। এরপর কার্চার মারা যান।

কার্চারের মৃত্যুর পর তাঁর সংগ্রহে থাকা অধিকাংশ পাণ্ডুলিপি জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়। জানো কি নাম সেই জাদুঘরের?

কলেজিও রোমানোর জাদুঘরে ওই বইটি স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু তখনকার সমাজব্যবস্থায় একটি বড় রকমের পরিবর্তন চলে আসে। কলেজিও রোমানোসহ বিভিন্ন বড় বড় সংগ্রহশালায় “যীশু সমাজ” সংঘ থেকে রুল জারি করা হয়। রুল অনুযায়ী হাজার হাজার পাণ্ডুলিপি সরিয়ে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়। অনেক পাণ্ডুলিপি ধ্বংস করে ফেলা হয়। তবে কিছু পাণ্ডুলিপি গোপনে স্থানান্তরিত করা হয়। এই গুটিকয়েক পাণ্ডুলিপি ভ্যাটিকান পোপের গোপন লাইব্রেরিতে রাখা হয়। এই পাণ্ডুলিপিগুলো নথিপত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রায় ৯ বছর লেগে যায়। এইসময়ে একজন কিছু পাণ্ডুলিপি অর্থের বিনিময়ে নিজের মালিকানায় নিয়ে আসেন। তোমরা কি জানো তাঁর নাম কি?

তাঁর নাম হলো “উইলফ্রিড ভয়নিচ”। তাঁর সাথে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের খূব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি তাঁদের সাথে চুক্তি করে অর্থের বিনিময়ে কিছু পাণ্ডুলিপি নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেন। কিন্তু এতে কিছু শর্ত ছিল। শর্ত হলোঃ  এই পাণ্ডুলিপিগুলো তিনি বাইরে কোনোভাবেই প্রকাশ করতে পারবেন না। এই শর্তে ভয়নিচ রাজিও হয়ে যান। তিনি সব পাণ্ডুলিপি থেকে বুঝতে পারেন যে এখানকার একটি বই এর লেখাগুলো তিনি পড়তে পারছেন না। তিনি অনেক পড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, প্রত্যেকবারই তিনি ব্যর্থ হন। যেহেতু শর্ত ছিল, এসব বই তিনি বাইরে প্রকাশ করতে পারবেন না, তাই ইউরোপে থাকাকালীন তিনি এই বইটি জনসম্মুখে নিয়ে আসতে পারেন নি।

এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় ১ম বিশ্বযুদ্ধ। এই সময়ে ভয়নিচ সপরিবারে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গিয়ে তিনি কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে খুঁজেন। অবশেষে, তিনি বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে খুঁজে পান। তিনি পাণ্ডুলিপির কথাগুলো তাঁদের জানান। তাঁদের অনুপ্রেরণায় ১৯২১ সালে ফিলাডেলফিয়াতে তিনি একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সেখানে তিনি জনসম্মুখে এই পাণ্ডুলিপিকে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি যখন মারা যান, অর্থাৎ ১৯৩০ সালের পর থেকে তাঁর সম্মানার্থে এই বইয়ের নাম হয় “ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি”। তাঁর মৃত্যুর পর বইটি হেনরি হায়ভারনেট এর কাছে হস্তানন্তর করে তাঁর পরিবার। এই হেনরি হায়ভারনেট ছিলেন ওয়াশিংটনে অবস্থিত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এভাবে আরও কয়েক দফা হাত বদল হয়ে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক গবেশক এই বইয়ের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই বইয়ের রহস্য কেউ ভেদ করতে পারে নি।

বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের এই ইতিহাস? তোমরা কি এই বইয়ের ভিতরে কি লেখা আছে, তা জানতে চাও? জানতে চাও, এই বইয়ের লেখক কে? তাহলে কমেন্ট করে জানিয়ে দাও। আমি এর পরের পর্বে এই বইয়ের লেখক আর এই বইয়ে কি লেখা আছে, তা নিয়ে আলোচনা করব।

ধন্যবাদ সকলকে।

তথ্যসূত্রঃ ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি উইকিপিডিয়া

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ