৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি নক্ষত্রের মৃত্যু হওয়ার ভিডিও নাসা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে শেয়ার করার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়াতে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। আসলে এই নক্ষত্রটি তার দীপ্তমান আলো হারিয়ে মৃতদের তালিকায় পড়ে গেছে। এই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পড় তা ভাইরাল হয়ে যায়, কারণ আগে বিজ্ঞানীরা মৃত নক্ষত্র সম্পর্কে যুক্তি দিত। কিন্তু এই ভিডিও নাসার টেলিস্কোপে ধরার পর, বিজ্ঞানীরা মৃত নক্ষত্র সম্পর্কে একটা বড় প্রমাণ পেয়ে গেল। ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে কি কি দেখা গেছে? এই নক্ষত্রটি কোন গ্যালাক্সিতে বিদ্যমান? কিভাবে মৃত্যু হলো? তাই নিয়ে আজকের আলোচনা।
আমাদের এই পুরো মহাবিশ্বে এমনসব আজব ঘটনা বিদ্যমান, যা হয়তো মহাবিশ্বের কাছে সাধারণ ঘটনা মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে তা বড়ই অদ্ভুত আর আজব লাগে। এরকম একটি ঘটনা হলো নক্ষত্রের মৃত্যু। অনেকেই এই নক্ষত্রের মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত। আবার অনেকেই এটা জানে না। বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর আগে নক্ষত্রের যে মৃত্যু হয় তার প্রমাণ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ৩ বছর আগের বছরটির মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে নাসার টেলিস্কোপে ধরা পড়ে সেই প্রমাণের ভিডিও।
তো কথা না বাড়িয়ে চল এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।
এই নক্ষত্রটি হচ্ছে “স্পাইরাল নেবুলা” গ্যালাক্সি এর অন্তর্ভুক্ত একটি নক্ষত্র। এই গ্যালাক্সি/ছায়াপথ ১৭৯১ সালে ১ম আবিষ্কৃত হয়। আর এটার আবিষ্কার কে করেছিল, তোমরা কি তা জানো? এটা আবিষ্কার করেছিল একজন ব্রিটিশ মহাকাশবিদ। সেই মহাকাশবিদ এর নাম “উইলিয়াম হার্সেল”।
এই ছায়াপথের নাম “স্পাইরাল নেবুলা” হলেও, ছায়াপথগুলোর নামগুলো সহজবোধ্য করার জন্য, নাসা প্রত্যেকটিকে একেকটি নামের কোড প্রদান করে। অর্থাৎ, সব গ্যালাক্সির নাম যেন সহজেই মনে থাকে, সে জন্য গ্যালাক্সিসমূহের নামগুলোকে একটি শ্রেণিতে সাজানো থাকে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, এই গ্যালাক্সির নাম “এনজিসি ২৫২৫”।
তো এই গ্যালাক্সির একটি নক্ষত্রের মৃত্যু হওয়ার ঘটনা রেকর্ড করে নাসার একটি টেলিস্কোপ।
আমাদের এই মহাবিশ্বে কত নক্ষত্র যে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে, কত নক্ষত্র যে তাদের দিপ্তমান আলো হারিয়ে মৃত নক্ষত্রে পরিণত হচ্ছে, তা আমরা জানি না। বিশ্বাসও করতাম না, যদি না নক্ষত্র মরে যাবার ঘটনা আমরা ভিডিও আকারে দেখতাম। আমাদের মধ্যে যারা এ বিষয়ে বেশি ইন্টারেস্ট রাখি, তারা হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ভিডিওটি দেখেছি। আর জানিও যে এইটা হাবল টেলিস্কোপ দ্বারা ভিডিও করা হয়েছে।
আমরা জানি, নক্ষত্র যখন মারা যায় তখন মারা যাওয়ার আগে বিশাল এবং ভয়ংকর এক বিস্ফোরণ ঘটে, যাকে সুপারনোভা বলা হয়। ২০১৮ সালের একেবারেই শুরুতে জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই সুপারনোভা চিহ্নিত করে একজন শখের জ্যোতির্বিদ। নাম তাঁর “কইচি ইতাগাকি”। তখন এটার নাম রাখা হয়, “এসএন ২০১৮জিভি”। ফলে ২০১৮ সালের শুরুতে ফেব্রুয়ারী মাস থেকে এই “এনজিসি ২৫২৫” গ্যালাক্সির উপর নজর রাখতে শুরু করে নাসার “হাবল” টেলিস্কোপ। ধারণা করা হচ্ছিলো এই গ্যালাক্সির ওই নক্ষত্রটি হয়তো ওই বছরেই মৃত হয়ে যাবে। তাই পৃথিবী থেকে ৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ওই নক্ষত্রের উপর হাবল টেলিস্কোপ নজর রাখতে শুরু করে।
টাইম-ল্যাপ্সের শুরুতে ওই গ্যালাক্সির বাইরে “এসএন ২০১৮জিভি” সুপারনোভাটা আলোকচ্ছটার মতো দেখাতে শুরু করে। এর খানিক পরেই দেখা গেল ওই নক্ষত্রটি অনেক বেশী জ্বলে উঠে। ওই গ্যলাক্সির সবচেয়ে বেশী উজ্জ্বল নক্ষত্রের চেয়েও অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওই নক্ষত্রটি। এসময় যে পরিমাণ শক্তি ছড়িয়ে পড়ে, তার পরিমাণ কত বেশী তা কি তোমরা জানো? প্রায় ৫০০ কোটি সূর্যের তেজস্ক্রিয়তার সমান। রসায়ন যারা পড়েছ, তারা নিশ্চয়ই জানো যে, রসায়নবিদ্যার নিয়ম মেনে খুব বেশি বিকিরণ হতে শুরু করলে তার পক্ষে বেশিক্ষণ দৃশ্যমান হওয়া সম্ভব নয়। ফলে এই নক্ষত্রেরও এরকম অবস্থা হয়েছে। ধীরে ধীরে সে তার নিজস্ব আলো হারিয়ে ফেলেছে। সুপারনোভা সৃষ্টি করে পরমুহূর্তেই নক্ষত্রটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
২০১৮ সালের সারা বছর ধরে ওই নক্ষত্রের উপরে নজর রাখে হাবল টেলিস্কোপ। নিয়মিত ব্যাবধানে ছবি তুলতে তুলতে, নক্ষত্রের মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত ছবি তুলা হয়। এরপরেই সমস্ত ছবি মোট ৩০ সেকেন্ড ভিডিও আকারে নাসা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এই ভিডিওটিতে নক্ষত্রটির সুপারনোভা থেকে শুরু করে, মৃত হওয়া পর্যন্ত সবকিছুই তুলে ধরা হয়েছে।
ভিডিওটি দেখতে চাইলে, আমাদের ফেসবুক পেইজ এ প্রবেশ করে দেখতে পারো। নিচে পেইজটির লিংক নিচে দেওয়া হলো।
https://www.facebook.com/merajojana
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের এই পর্ব। অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।
ধন্যবাদ সকলকে।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
ইমেইজ ক্রেডিটঃ pexels.com
ইমেইজ ডিজাইনঃ canva.com
0 মন্তব্যসমূহ