জুতা-গাছ বা সু-ট্রিতে কেন জুতা ঝুলিয়ে রাখা হয়? কি এমন বিশেষ কারণ, যার জন্যে মানুষ গাছে জুতা ঝুলিয়ে রাখে? জুতা গাছের বিশেষত্বই বা কি? জুতা গাছে কি কি ধরণের জুতা ঝুলিয়ে রাখা হয়? এই গাছ নিয়ে মানুষের মনে কি ধরণের বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে? আজকের এই পর্বে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরসহ এই জুতা গাছ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বন্ধুরা জুতার গাছ কি? কোথায় পাওয়া যায়? কিভাবে সামনে এলো? কতসালে এলো? এসব প্রশ্নের উত্তর আমি এর আগের পর্বেই দিয়ে দিয়েছি? আরও দিয়েছি এই জুতা-গাছ তৈরি হওয়া সম্পর্কে ২টি মতবাদ। তো যারা সেটি পড়নি, তোমরা চাইলে সেটা পড়ে আসতে পারো। তোমাদের সুবিধার্থে আমি আগের পর্বের লিংক নিছে দিয়ে দিচ্ছি।
তো চল শুরু করি আজকের পর্ব।
মতবাদ ৩।
অনেকেই মনে করেন যে উত্তর আমেরিকার মানুষ এই গাছে তাদের অতিরিক্ত জুতা জোড়া ঝুলিয়ে রাখত। এই কারণে যে, যাদের প্রয়োজন হবে তারা যেন তা পরতে পারে। যাদের প্রয়োজন মানে যাদের জুতা কেনার সামর্থ্য নেই। অর্থাৎ যারা খুবই গরিব বা অসহায়, তাদের সুবিধার্থে ধনী লোকেরা তাদের অতিরিক্ত জুতা-জোড়া গাছে ঝুলিয়ে রাখত। সেই থেকে এই জুতা গাছের প্রচলন।
মতবাদ ৪।
জনশ্রুতিতে শোনা যায় যে, এটার প্রচলন ২য় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু হয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে সৈনিকেরা যুদ্ধ করতে যায়। তারা যুদ্ধে যাওয়ার আগে তাদের জুতা জোড়া গাছে ঝুলিয়ে রাখে এই আশায় যে যুদ্ধ শেষে যখন তারা ফিরে আসবে, তখন যেন এই জুতা-জোড়া পরতে পারে। এ বিষয়ে আরও একটি মতবাদ হলো, যুদ্ধ করতে গিয়ে তারা যদি মারা যায়, বা অন্য কোনো কারণে স্বদেশে আর না ফিরে আসে, তবে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যেন এই জুতা জোড়া দেখে তাদের পরিস্থিতির কথা জানতে পারে। এবং পৃথিবীর কাছে তাদের যুদ্ধে বলিদান হওয়ার শেষ চিহ্নটুকু থাকে। এইসমস্ত প্রত্যাশায় যোদ্ধারা যুদ্ধে যাওয়ার আগে তাদের জুতা জোড়া গাছে ঝুলিয়ে রাখে। আর এই থেকে নাকি এই জুতা-গাছের সূচনা।
এবার আসি কোন কোন ধরণের জুতা ঝুলিয়ে রাখে তারা। স্নিকারস থেকে শুরু করে স্লিপারস, স্যান্ডেল, আইস বুটস সব ধরণের জুতা এখানে ঠাই পায়।
আমরা তো বিভিন্ন মতবাদ সম্পর্কে জানলাম। এবার এমন এক মতবাদ শুনবো, যা আমাদেরকে এই বিষয়ে অনেকটা ধারণা দিতে সক্ষম।
গুরুত্বপূর্ণ মতবাদঃ
একজন আমেরিকার অধিবাসী নাম ভার্জিনিয়ার ব্রুস সারসিন জানান যে, টরেন্টো থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তরে দক্ষিণ বেভারটনের লেক রিজ রোড অবস্থিত। এখানে একটি জুতার গাছ আছে। তিনি জানান যে, এই গাছটি একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। তাঁকে তখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কিসের ভিত্তিতে তিনি এই কথা বলছেন? তিনি উত্তরে তখন এমন কিছু কথা বলেন, যা এ বিষয়টিকে বুঝতে সহজবোধ্য করে।
“আমার মা ছিলেন একজন দরিদ্র মহিলা। তিনি কির্কল্যান্ড লেকে বাস করতেন। অনেক অভাব ছিল তার সংসারে। আমার মায়েরা মোট ১৪ ভাইবোন ছিল। ফলে তাদের কখনোই জুতা পড়ার ভাগ্য ছিল না। কারণ খাবার জোগাতেই তার বাবা হিমশিম খেতেন। অনেক কষ্টে তাই আমার মায়েরা মানুষ হয়েছে। এই কষ্ট তাই মা এখনো ভুলেনি। তাই যাতে অন্যের উপকার হয়, বিশেষ করে জুতা সবাই পরতে পারে, সে জন্য আমার মা আমাদের উপদেশ দিতেন। তাই আমার বড় ভাই জর্জ ১৯৯০ সালে রিজ রোডের পাশের একটি গাছে এক জোড়া জুতা ঝুলিয়ে রাখেন। এরপরে ১৯৯১ সালে আমার যখন ছেলে সন্তান হয়, তখন ওই গাছে গিয়ে আমি এক জোড়া ছেলে জুতা ঝুলিয়ে রাখি। পরবর্তীতে আমার যখন কন্যা সন্তান হয়, তখন আবারো এক জোড়া মেয়ে জুতা ওই গাছে ঝুলিয়ে রাখি। এরপর থেকে এই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তখন থেকেই অনেকে তাদের নব্জাতক শিশুর জন্মের পর এই গাছে জুতা ঝুলিয়ে স্মরণীয় করে রাখে। এখন কারো জুতার অভাব নেই বলে, জুতা নিতে নয়, বরং সবাই জুতা রাখতে যান ওখানে।”
তো বন্ধুরা এই ছিল জুতার গাছের সূচনার মতবাদ। কিন্তু বর্তমানে প্রায় অনেক দেশেই এই জুতার গাছে অনেক মানুষ জুতা ঝুলিয়ে রাখতেছে। কিন্তু কি এমন কারণ যে, বর্তমানেও এই জুতার গাছের প্রচলন আছে?
জানতে চাইলে এর পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর হ্যাঁ, এই পর্বটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।
ধন্যবাদ সকলকে।
তথ্যসূত্রঃ daily-bangladesh.com
ইমেইজ ক্রেডিটঃ pixabey.com
ইমেইজ ডিজাইনঃ canva.com
0 মন্তব্যসমূহ