বগা লেক নিয়ে কল্পকাহিনীর কোনো শেষ নেই। একেক গোত্র একেক মতবাদ পোষণ করে। কারো মতে বগা নামক ড্রাগনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে এই বগা লেকের, কারো কারো মতে মহাকাশ থেকে আগত কোনো এক অদ্ভুত প্রাণী বম ভাষায় যাকে বগা বলা হয়, তার কারণে সৃষ্টি হয়েছে এই বিশ্ব আলোচিত করা, রহস্যময়, সৌন্দর্যে ঘেরা বগা লেকের। এই বগা লেক নিয়ে তাই কল্পনা-জল্পনার কোনো শেষ নেই।
আমি গত ২ টি পর্বে বগা ড্রাগন এর আগমন এবং এর দ্বারা সৃষ্ট বগা লেক এই মতবাদের কথা তুলে ধরেছিলাম। যারা সেই পর্বগুলো দেখনি, তাদের বলছি তোমরা সেই পর্বগুলো দেখে আসো।
আমি তোমাদের সুবিধার্থে নিচে ওই ২ টি পর্বের চিত্রের লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।
বগা লেকে ড্রাগনের বাস বগা লেকে কি সত্যিই ড্রাগন ছিল
দয়া করে সেই পর্বগুলো পড়ে আসবে। আর তা না হলে তোমরা এই পর্ব ভালো করে বুঝতে পারবে না।
আজকে আমি এর ৩য় একটি মতবাদ নিয়ে আলোচনা করব। মতবাদটি হলো একটি দেবতাকে নিয়ে। খুমি সম্প্রদায়ের দেবতাকে নিয়ে। আর এই মতবাদটি খুমি সম্প্রদায় এর মতবাদ। তাদের কাছ থেকে এই কল্পকাহিনী এসেছে।
তো চল বন্ধুরা শুরু করি আজকের এই পর্ব।
“ এটা অনেক বছর আগের কথা। আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগের কাহিনী। আঞ্চলিক রূপকথা অনুযায়ী তখন (বর্তমান বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার কাছে) বগা লেকের কাছে একটি সম্প্রদায় বাস করত। তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করত। গাছপালা, পাহাড়, চন্দ্র, সূর্যসহ বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করত।
এভাবে বিভিন্ন বস্তুকে পূজা করার সময়, তাদের প্রতি একজন দেবতা নাকি রুষ্ট হয়ে যান। তার ক্রোধ দিন দিন বাড়তেই থাকে। ধীরে ধীরে তিনি ক্রোধের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যান। তিনি তার ক্রোধের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থ হন।
তিনি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণও হারিয়ে ফেলেন। শুধু তাই নয়, এর ফলে তিনি একটি ড্রাগনের রূপ ধারণ করেন।
শুধু ড্রাগন হলে কোনো কথাই থাকত না। তিনি শুধু ড্রাগনই হন নি, বরং স্থানীয়দের ধরে ধরে খেতে শুরু করেন।
গ্রামবাসীরা ভয়ে তটস্থ। তারা কিছুতেই ওই ড্রাগনরুপি দেবতাকে তুষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছিলো না। ওই ড্রাগনরুপি দেবতা মানুষদের মজা করে খেতে শুরু করেছিল।
কিন্তু একদিন মানুষ না পেয়ে নাকি ভিন্ন কোনো কারণে ওই ড্রাগনরুপি দেবতা খুব জোরে নাকি হুংকার ছাড়েন। এর ফলে ভয়ানক আওয়াজ হয়।
গ্রামবাসীরা বলেন, এই আওয়াজ নাকি এতই ভয়ংকর যে, সেই আওয়াজে একটি প্রলয় আকৃতির বিশাল ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এই ভুমিকম্পে প্রচুর মানুষ মারা যায়।
আর যেখানে ওই গ্রামবাসীরা বাস করত, ওই জায়গাটা ধংস হয়ে একটা গর্তের সৃষ্টি হয়। পরে সেখানে বৃষ্টির পানি পড়তে শুরু করে। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে ভরে যায় ওই গর্তটি। ধীরে ধীরে গর্তটি সুন্দর এক হ্রদের সৃষ্টি করে। এরপর নাকি কোনোদিন ওই হ্রদের পানি শুকায় নি। বৃষ্টি হোক বা না হোক ওই হ্রদের পানি কখনই নাকি শুকায় না”।
এভাবে নাকি সৃষ্টি হয়েছে বগা লেকের। এখন বসন্তে ওখানকার পানি ঘোলাটে হয় বলে, গ্রামবাসীদের বিশ্বাস আরও বদ্ধমূল হয়ে গেছে। তাদের কথ্যভাষায় এখনও তাদের সেই দেবতা রুষ্ট হলে পানির রঙ ঘোলাটে করে দেয়। তাদের দেবতার রুস্টতার কারণে এখনো সেখানে খুব প্রলয় উঠে। তাই অনেকেই ওখানে গিয়ে পূজা করে, যেন তাদের দেবতা ওখানকার পানিকে যেন ঘোলাটে আর না করে, আর যেন তাদের উপর ক্ষোভ না প্রকাশ করে।
কিন্তু, বন্ধুরা তোমাদের কি মতামত? সত্যিই এমনটা হতে পারে? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবে না যেন।
আর হ্যাঁ, এ সম্পর্কে আরও একটি মতবাদ রয়েছে। আমি এর পরের পর্বে সেই মতবাদটি তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আজকে তাহলে এই পর্যন্তই।
ধন্যবাদ সকলকে।
তথ্যসূত্রঃ বগা লেক উইকিপিডিয়া
ইমেইজ ক্রেডিটঃ pexels.com
ইমেইজ ডিজাইনঃ remove.bg & canva.com
0 মন্তব্যসমূহ