বন্ধুরা, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ফুলের নাম কি? কোথায় পাওয়া যায়? কত বড় হয়? কীভাবে চাষ করা হয়? এর বিশেষত্ব কি? তোমরা কি তা জানো? অনেকেই আমরা জানি না। তো আজকে আমরা আমাদের অজানা সেই ফুল নিয়ে কথা বলব। কথা বলব, সবচেয়ে প্রাচীনতম ফুল নিয়ে।
ভালোবাসার প্রতীক হচ্ছে ফুল। সৌন্দর্যের দিক দিয়েও এটি অনেক সুন্দর। আমাদের এই পৃথিবী জুড়ে যে কত রকমের ফুল ফোটে, তার কোনো হিসাব নেই, হিসাব নেই তাদের সৌন্দর্যের বিচিত্রতা নিয়ে। ১২ মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ফুটে ফুটে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। প্রতিটি ফুলেরই থাকে তাদের নিজস্ব আকার। আরও থাকে নিজস্ব রং, গন্ধ ইত্যাদি। সাধারণত, সব ফুলই একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। অধিকাংশ ফুলেরই গড় উচ্চতা তিন-চার ইঞ্চির খুব একটা বেশী নয়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন ফুলও আছে, যার আকার, ওজন অনেক বড় হয়ে থাকে।
তেমনই এক বড় ফুল হলো “আরুম টাইটান”। এই ফুলটি আরেসেই পুষ্পগোত্রের একটি ফুল, যার বৈজ্ঞানিক নাম Amorphophallus titanum। এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ফুল হিসেবেও পরিচিত। যদিও প্রাচীন ফুলগুলো বর্তমানে বিলুপ্তির পথে, জাপানের টোকিও শহরের জিনদাই বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই “আরুম টাইটান” শোভা বাড়িয়েই চলছে। এই ফুল প্রকৃতির একটি বড় বিস্ময়। এই ফুলটি প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর ফুটে। এই ফুল এর সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হচ্ছে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রাচীন ফুল।
“আরুম টাইটান” এর বৈশিষ্ট্যঃ
আকৃতিঃ এই ফুলটি বিশাল আকৃতির। এই ফুল লম্বায় ৮ ফুট আর চওড়ায় ১০ ফুট হয়ে থাকে।
ওজনঃ এই “আরুম টাইটান” ফুল এর ওজনও অনেক। ওজনের দিক থেকে ফুলটি কম আকর্ষণীয় নয়। ৫০ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয় এক একটি “আরুম টাইটান” ফুলের।
বয়সকালঃ এই “আরুম টাইটান” ফুলের গাছটির জীবনকাল ৪৫ বছরের মতো। এই সময়ের মধ্যেই মাত্র ৩-৪ বার এর ফুল ধরে। আমরা জাপানের কিয়োডো সংবাদ সংস্থার খবর থেকে জানতে পারি, এই ফুলের আয়ু খুবই ক্ষণস্থায়ী। এই ফুলটি প্রস্ফুটিত হতে হতে যখন পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে যায়, তখন সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হওয়ার এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই সেই ফুল ঝরে যায়। এমনিতেই তো ৫ বছরে একবার ফুটে। আবার ফুটার পর ২ দিনের মধ্যেই ঝরে পড়ে যায়। তাই বছরের পর বছর যখন আরুম টাইটান ফুলের গাছটিতে কোনো ফুল ধরে না, তখন একে দেখে সত্যিই দর্শনার্থীদের খুব মায়া হয়। আবার উপভোগও করে তারা। এরকম এক দর্শনীয় ব্যাপার তো উপভোগ করার মতোই, তাই না!
যেভাবে ফুলটি বড় হতে থাকেঃ এই ফুলটি দিনে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে। পুরো ফুলটি বিকশিত হতে কয়েক মাস লেগে যায়। এই ফুলের যারা পুং লিঙ্গ, তথা পুরুষ ফুলগুলো হালকা ক্রিম রঙের হয়ে থাকে। আর যারা স্ত্রী লিঙ্গ, তথা স্ত্রী ফুলগুলো বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। যেমনঃ গোলাপি, কমলা, বেগুনি ইত্যাদি। আর তোমরা জানলে অবাক হবে যে, টাইটান ফুলটি যখন পূর্ণ বিকশিত হয়, তখন এই ফুল থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপন্ন হয়। আর এই তাপের ফলেই এই ফুল থেকে বেশ গন্ধ ছড়ায়। এই গন্ধে মাতোয়ারা হয় মাছিসহ ছোট ছোট কীটপতঙ্গগুলো। ফলে গাছটির পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। আর এই গাছটি অন্যান্য সাধারণ গাছের মতোই বীজ থেকে জন্মায়।
এর পাতাঃ এই ফুলের পাতা প্রায় ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আর এই ফুলের পাতা একক ধরণের। এর পাতা বেড়ে উঠতে অনেক সময় লাগে। প্রায় ১২-১৮ মাস।
ফুলের গন্ধঃ একটু আগে আমরা দেখলাম যে, এই ফুল যখন ফোটে, তখন বিভিন্ন কীটপতঙ্গ এর দিকে আকৃষ্ট হয়। কিন্তু তোমরা কি জানো এর গন্ধ কি রকম? আসলে এর গন্ধ যদি আমাদের নাকে ঢুকে, তখন আমরা দেখব এর গন্ধ অনেকটা পচা মাংসের মতো। খুবই বিদঘুটে এই ফুলের গন্ধ। অনেকে তাই একে কর্পস ফ্লাওয়ার/ শবফুল বলে ডাকে। কিন্তু তাই বলে, এই ফুলের সব প্রজাতিই এরকম গন্ধ ছড়ায় না। কোনো কোনো প্রজাতি অনেকটা কলার মতো গন্ধ ছড়ায়। কোনো কোনোটাতে আবার কচি গাজরের গন্ধও পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ প্রজাতিগুলোতেই এর গন্ধ পচা মাংসের মতো।
তো যাই হোক। কেমন লাগলো আজকের এই পর্ব? তোমরা কি জানো এই প্রজাতির সবচেয়ে বড় ফুল কোথায়, কখন, কীভাবে ফুটেছিল? না জানলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি এর পরের পর্বেই এই নিয়ে আলোচনা করব।
পরের পর্ব পড়তে নিচে ক্লিক করুনঃ
ধন্যবাদ সকলকে।
0 মন্তব্যসমূহ