এই ফুলের সবচেয়ে বড় ফুলটি কোথায় ফুটেছিল?
গত ৪ বছর আগে, তথা ২০১৭ সালে জাপানের জিনদাই বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিশাল দৈত্যাকার আরুম ফুল ফুটেছিল। এই ফুলটি দেখার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। যখন এই ফুল ফোটে, তখন হাজার হাজার জাপানবাসী ভিড় জমিয়েছিল এই ফুলটিকে একবার দেখার জন্য। এখানে যে ফুলটি ফুটেছিল তার উচ্চতা ছিল প্রায় ৬.৫ ফুট। আর এর ওজন হয়েছিল প্রায় ৫০ কেজি।
কিন্তু এর চেয়েও বড় ফুল ফুটেছিল ২০১০ সালে। আর সেটি ফুটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর নিউ হ্যাম্পশায়ারের লুই রিসিয়ার্ডিয়েলো এর একটি বাগানে। সেখানে যে আরুম টাইটান ফুলটি ফুটেছিল তার উচ্চতা ছিল প্রায় >১০ ফুট।
আবার ২০১৪ সালে এরকম বড় আরও একটি ফুল ফুটেছিল। ২৯শে সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ড দেশ। এখানকার বাসেল ইউনিভার্সিটির বোটানিক্যাল গার্ডেনে ৭.৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ফুল ফুটেছিল। ১৯৩৬ সালে এই ফুলটি ১ম সুইজারল্যান্ডে দেখা গিয়েছিল। আর বাসেল উদ্যানে এটি ২য় বারের মতো ফুটেছিল ২০১৪ সালে। ১ম ফুটেছিল ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে।
ফুলটির আদি নিবাস কোথায় ছিল?
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের অভিমত অনুসারে ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রা দ্বীপে এই ফুলের আদি নিবাস ছিল। তাই অন্যান্য অঞ্চলে এটি বর্তমানে চাষ হলেও এটি ইন্দোনেশিয়ার জাত বলে পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এটি বিস্ময়কর ফুল হিসেবে সম্মান পেলেও সুমাত্রার যে রেইন ফরেস্ট আছে, সেখানে এদের কদর নেই বললেই চলে। সেখানে এদের শুধু বন্য ফুল হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সুমাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০-১২০০ ফুট উচ্চতায় যে পাহাড়ি অঞ্চল দেখা যায়, সেখানে এই ফুল জন্মায়।
এখানকার স্থানীয় মানুষের কাছে এটি অন্য নামে পরিচিত। এখানকার মানুষেরা এই ফুলকে “বুঙ্গা বাঙ্কাই”। এই যে বুঙ্গা বাঙ্কাই নাম, এর অর্থ কি? এখানে বুঙ্গা মানে ফুল আর বাঙ্কাই মানে শবদেহ।
এই যে ফুলের গাছটি, এটা কে প্রথম হদিশ পান, তোমরা কি জানো?
এই ফুলটির হদিশ পান বিজ্ঞানী ওদোয়ার্দো বেকারি। তিনি ছিলেন ইতালির বিজ্ঞানী। আজ থেকে প্রায় ১৪৪ বছর আগে তিনি এটার হদিশ পান। ১৮৭৮ সালে তিনি সুমাত্রায় যান। সেখানে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর প্রথম এই ফুলের হদিশ পান। আর তিনিই প্রথম এই ফুলের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দেন।
এই ফুলের চাষঃ
এই ফুলের চাষ সহজ ব্যাপার নয়। একজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মালি দরকার হয় এই ফুল চাষ করতে। বুঝতেই পারছ এই ফুলের চাষ কতটা কষ্টের হবে। কেননা যার একটি ফুল ফুটতে ৫ বছর সময় লেগে যায়, সেই গাছটা বড় হতে নিশ্চয়ই তার চেয়ে বেশী সময় লাগবে। এই গাছটি বেড়ে উঠতে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। গাছ বেড়ে উঠার পর সাধারণত ২-৩ বছর সময় লাগে গাছটিতে ফুল আসতে। তারপর একবার ফুল আসলে, পরবর্তী ফুলের জন্য ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। তবে কোনো কোনো গাছ বড় হয়ে যাবার ১০ বছর পর ফুল আছে। আবার কোনো কোনো গাছে একবার ফুল আসার পর পরবর্তী ফুল ২ বছরের মধ্যে চলে এসেছে, এমন খবরও পাওয়া গেছে।
বাগানে চাষঃ
১ম দিকে এটি বন্য ফুল হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু এটি পরে বাগানে চাষ করা শুরু হয়। বাগানে ১ম আরুম টাইটানের চাষ শুরু হয় অষ্টাদক শতকের শেষের দিকে। এটা ছিল ১৮৮৯ সাল। ব্রিটেন দেশ। এই দেশের একটি গার্ডেন, নাম কিউ রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই গার্ডেনই ১ম আরুম টাইটান গাছের মোট ১০০ টি চারা রোপণ করা হয়েছিল। তবে সেটা স্বীকৃতি পায় নি।
পরে ১৯৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে একটি গার্ডেন, যার নাম নিউইয়র্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন, সেখানে ১ম টাইটান ফুলটি গাছে প্রস্ফুটিত হয়েছিল। আর তাই এটিই ১ম গার্ডেনে ফোঁটা টাইটান ফুল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক জায়গায়, অনেক বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই ফুলের চাষ হচ্ছে।
এই ফুল যদিও বিলুপ্তির পথে, তবুও ফুল প্রিয় মানুষেরা একে ভালোবেসে আগলে রাখছে তাদের গার্ডেনে।
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের এই পর্ব? কমেন্ট করে জানিয়ে দিও।
ধন্যবাদ সকলকে।
0 মন্তব্যসমূহ