Looking For Anything Specific?

ads header

"ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি" যে বই কেউ পড়তে পারে না!


পৃথিবীর ইতিহাসে রহস্যময় একটি বই, যে বই এর ভিতরের লেখাগুলো আজ পর্যন্ত কেউই পড়তে পারেনি, যা পৃথিবীর অন্যতম অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে জায়গা দখল করে নিয়েছে, সেই বইটির নাম কি? সেই রহস্যময় বইটির নাম হলো ভয়নিচ পাণ্ডুলিপিকিন্তু এই বইটি কি জিনিস, তা জানতে নিশ্চয়ই ইচ্ছা হচ্ছে? চল জেনে নিই এই বইটি আসলে কি জিনিস।

ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি আসলে মধ্যযুগে লেখা একটি বই। এই বইটি অন্যান্য বই থেকে আলাদা। কারণ, এই বইয়ের লেখার ধরণ, অন্যান্য বইয়ের মতো নয়। এর লেখাগুলোও কেউ পড়তে পারে না। তাই ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে একটি। এই বইটি ১ম জনসম্মুখে আসে উইলফ্রিড ভয়নিচের মাধ্যমে। তাই এই বইটির নাম রাখা হয় ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি। ইংরেজিতে যাকে বলে Voynich Manuscript। বইটি ক্রয় করার ৯ বছর পর ভয়নিচ যখন College of Physicians of Philadelphia এর একটি সভাতে এটি প্রদর্শন করেন, তখন থেকেই এই বই নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। এখনো চলছে এই গবেষণা।

এই বইটিতে মোট পৃষ্ঠা প্রায় ২৩৪। তবে অনেক গবেষক মনে করেন এই বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা, আবিষ্কার হওয়ার আগেই হারিয়ে গিয়েছে। এই বইটি চামড়া দিয়ে বাঁধাইকৃত। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এই বইটির কার্বন ডেটিং করা হয়। এই বইয়ের ৪টি পৃষ্ঠা নিয়ে এটি করা হয়। কার্বন ডেটিং এর ফলাফল অনুযায়ী এই বইটি সম্ভবত ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের সময়ে লেখা হয়েছিল। বইটি লেখা হয়েছে অদ্ভুত সব বর্ণমালার সাহায্যে। ইতিহাসবিদরা ইতিহাস ঘেঁটেও এরুপ বর্ণমালার অস্তিত্ব বের করতে ব্যর্থ হন। পরে যখন আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কার হয়, তখন আধুনিক কম্পিউটার এর সাহায্যেও পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষা চালানোর পরেও এর বর্ণমালার অস্তিত্ব বের করা সম্ভব হয় নি। আর তোমরা জানলে অবাক হবে যে, এই পাণ্ডুলিপিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার ধরণের বর্ণের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও কিছু জিনিস তোমাদের অবাক করে দেবে। এই পাণ্ডুলিপিতে লিখিত বর্ণনার সাথে সাথে হাতে আঁকা ছবিও পাওয়া গেছে। এর ফলে বইটি আরও রহস্যময় হয়ে উঠেছে। বইয়ে যেসব কালি ব্যবহৃত হয়েছে, তাদের মধ্যে বড় কোনো ধরণের পার্থক্য পাওয়া যায় নি। এই বইয়ের আরও একটি চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে, এই বইয়ের লেখকের নাম সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারেনি। কারণ, এই বইয়ে অন্যান্য বইয়ের মতো শুরুতে বা শেষে লেখকের নাম/স্বাক্ষর নেই। 

এই বই থেকে এখন পর্যন্ত কি কি জিনিস সম্পর্কে জানা গেছে?

এই বই জনসম্মুখে আসার পর থেকেই একে নিয়ে অনেক গবেষণা শুরু হয়। কিন্তু কেউই এর পাঠোদ্ধারে সফল হতে পারে নি। এই বই নিয়ে অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, ভাষাবিদ বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করে গেছেন। এমনকি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও এটি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। তাঁরাও এর পাঠোদ্ধার করতে ব্যর্থ হলেও, তাঁরা বিভিন্ন সময় বেশ কিছু তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন এই পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে, যা আমাদেরকে কিছু ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছে। তো চল জেনে নিই সেসব গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব, যা এই পাণ্ডুলিপি থেকে জানা গেছে।

সবার প্রথমে আলোচনা করা যাক, ছায়াপথ সম্পর্কে। এক্ষেত্রে সবার প্রথমে যার নাম বলতেই হয়, তিনি হচ্ছেন উইলিয়াম নিউবোল্ড। তিনি এই বইয়ের শেষের দিকে আঁকা একটি চিত্রের মধ্যে দেখতে পান বৃত্তাকার একটি নকশা। এই নকশার সাথে তিনি মহাকাশে অবস্থিত একটি ছায়াপথের মিল খুঁজে পান। তিনি এখানে আরও একটি চিত্রের মধ্যে কোষের সাদৃশ্য দেখতে পান। কিন্তু তিনি ছিলেন ভুল। তাঁর তত্ত্বটিকে ভুল প্রমাণ করেন জন ম্যানলি। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক।

এরপর আরও একজন এর পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেন। তাঁর নাম রবার্ট ব্রাম্বো। তিনি ল্যাটিন বর্ণমালার সাহায্যে এর পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেন। But, তিনি বেশিদুর যেতে পারেন নি। তাঁর মতো অনেকেই এরকম চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, কিন্তু কেউই পাঠোদ্ধারের কাছেই যেতে পারেন নি। অনেকের তত্ত্ব, গবেষকেরা বাতিল করে দিয়েছেন। একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এর রহস্য মীমাংস করার চেষ্টা করেন FBI এর গবেষকেরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁরাও এতে সফল হয় নি।

আজ থেকে ৪৩ বছর আগে একটি গবেষণাপত্র এই বইয়ের রহস্য অনেকখানি উন্মোচিত করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭৮ সালে জন স্টকিও নামক এক গবেষক একটি বই লেখেন। বইয়ের নাম “Letters to God’s Eye”। এই বইয়ে তিনি ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি নিয়ে তাঁর গবেষণার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর এই তত্ত্ব ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন এই বইটিতে কোনো স্বরবর্ণের ব্যবহার করা হয়নি। রুশ গণিতবিদরা এটাকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে ফেলেন। RAS Institute of Applied Mathematics এর গণিতবিদরা এক অদ্ভুত উপায় খুঁজে পায়। তাঁরা পৃথিবীর বিখ্যাত ভাষাগুলোর সন্ধান করেন। সেগুলোর বর্ণমালা তাঁরা সংগ্রহ করেন। এরপর সেখান থেকে সব স্বরবর্ণ বাদ দেন। আর গবেষণা করতে শুরু করেন। তাঁরা যেসব ভাষা নিয়েছিল, তা হলোঃ

১। ইংরেজি

২। জার্মান

৩। ল্যাটিন

৪। গ্রিক

৫। রোমান

৬। স্লাভিক

৭। বাক

ইত্যাদি। এসব ভাষার স্বরবর্ণ বাদে বর্ণমালাগুলো নিয়ে তাঁরা বিশেষ কোড তৈরি করেন। আর এর সাহায্যে তাঁরা একটি বাক্যের বেশ কিছু শব্দের অর্থ বের করতে সক্ষম হন। এই বাক্যের প্রায় ৬০ ভাগ লেখায় ইংরেজি, জার্মান ও রোমান ভাষার সংমিশ্রণ ছিল। কিন্তু, একটি বাক্যের অর্থ বের করলেই তো আর রহস্য উন্মোচিত হবে না। এখনো অনেক কিছু বাকি। তবে এই ঘটনাটিকেই গবেষকেরা মনে করেন তাঁদের বিজয় হিসেবে। বর্তমানে এই পাণ্ডুলিপি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। আশা করা যায়, সুদূর ভবিষ্যতে হয়তো এই বইয়ের রহস্য উন্মোচিত হবে।

বন্ধুরা তোমাদের কি মতামত? এই রহস্য কি সত্যিই উন্মোচিত হবে জনসম্মুখে? অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।

এই বইটি কি করে জনসম্মুখে এলো? কীভাবে ভয়নিচ এর হাতে এলো? তোমরা জানলে অবাক হবে যে এর ভিতরে একটি রহস্যময় চিঠিও পাওয়া গেছে। তোমরা কি সেই চিঠি সম্পর্কেও জানতে চাও? তবে এর ২য় পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ধন্যবাদ সকলকে।

তথ্যসূত্রঃ ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি উইকিপিডিয়া

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ