Looking For Anything Specific?

ads header

"আকাশ সমাধি" তিব্বতে মরা মানুষকে শকুনের ভক্ষণ!


আমরা তো বিভিন্ন ধরণের সমাধির কথা জানি। কিন্তু “আকাশ সমাধি” নামটি কি কখনো শুনেছো? অনেকেই বলবে, আকাশে আবার সমাধি হয় নাকি? হয়। তিব্বতীরা এরকম সমাধি করে থাকে। এই সমাধিতে মৃতদেরকে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর শকুনদেরকে তা খাওয়ানো হয়। অনেকেই বলবে, কি বর্বর প্রথা এটা! চীনের তিব্বতের বৌদ্ধরা এমন প্রথা প্রচলন করে। আজকের এই পর্বে আমরা এই প্রথা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মৃতদেহ সৎকার নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন বিভিন্ন নিয়ম, বিভিন্ন রীতি চালু আছে। কবরে শায়িত করা, মৃতকে পোড়ানো, কফিনে দাফন, ঝুলন্ত কবর ইত্যাদি। তবে আমি যদি বলি, “আকাশ সমাধি” বলে একটা মৃতদেহ সৎকারের নিয়ম আছে, অনেকেই এটা বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আসলেই এরকম একটা নিয়ম আছে। আর এটা বাইরের কোনো দুনিয়ার নিয়ম না, আমাদের এই পৃথিবীরই একটা বড় ধর্মগোষ্ঠীর নিয়ম।

তো চল শুরু করি আজকের এই পর্ব।

এই প্রথা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে যেতে হবে করোনার উৎপত্তি যে দেশে হয়েছে, সেই দেশে। চীন দেশ। চীন দেশের তিব্বত অঞ্চল। চীনের এই তিব্বতে ২টি মৃতদেহ সৎকারের নিয়ম তৈরি করেছে সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরা। stupa burial (বৌদ্ধস্তূপ) এবং sky-burial (আকাশ সমাধি)। ১ম যে প্রথাটি রয়েছে, তা শুধুমাত্র উচ্চ স্তরের ধর্মিয় ব্যক্তিত্ব বা লামাদের জন্য প্রযোজ্য। 


আর ২য় যে প্রথাটি, সেটা সাধারণ মানুষের জন্য। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয় না। নিচে এরকম কিছু ক্ষেত্র দেওয়া হলোঃ

১। শিশু হলে ২য় নিয়ম মানা হয় না।

২। গর্ভবতী নারী হলে এই নিয়ম মানা হয় না।

৩। রোগাক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে এরকম নিয়ম মানা হয় না।

৪। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে এ রীতি পালন করা হয় না।

এবার চল শুরু করি, কীভাবে এই নিয়ম পালন করা হয়।

কোনো সাধারণ মানুষ যখন মারা যায়, তখন মৃত্যুর পর তিন দিন কেউ মৃতদেহকে স্পর্শ করে না। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মৃতদেহের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ধর্মীয় বাণী পাঠ করতে থাকেন। এভাবে ২ দিন ধরে এরকম চলতে থাকে। আকাশ সমাধির আগের দিন মৃতদেহকে পরিষ্কার করানো হয়। এরপর সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপরে মৃতদেহকে এমনভাবে রাখা হয় ঠিক যেন মায়ের গর্ভে শিশুর ভ্রূণ অবস্থান করে। এটা হলো মৃতদেহের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানটি ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায়। এরপর শবযাত্রা শুরু হয়। এই শবযাত্রার নেতৃত্ব দেন বৌদ্ধ লামারা। আত্মাকে পথ দেখানোর জন্য পড়তে থাকেন ধর্মীয় বাণী। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর, শববাহকরা মৃতদেহকে নিচে নামান। নামানোর পর মৃতদেহের উপর জড়ানো সাদা কাপড় খুলে ফেলেন। এরপর মৃতদেহটিকে পিছনদিকে উল্টানো হয়। কুঠার ও কাটারি দিয়ে কেটে ফেলা হয় মৃতদেহটিকে। এভাবে টুকরো টুকরো করে সমস্ত দেহটিকে কেটে ফেলা হয়। দেখে যেন মনে হয়, কোনো পশুকে খাওয়ার জন্য টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। এরপর মাংসের টুকরোগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় আকাশে, যেন শকুনেরা তা খেতে পারে। 


খাওয়া শেষ হয়ে গেলে হাড়ের টুকরোগুলো পড়ে থাকে এখানে সেখানে। তখন সেগুলোকে আবার জোরানো হয়। এরপর হাড়গুলোকে চুর্ণ-বিচুর্ণ করা হয়। করার পর আবার সেগুলোকে আকাশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই দৃশ্য কেবল মৃতের আত্মীয়-পরিবার-পরিজন বাদে কাউকে দেখার সুযোগ দেওয়া হয় না। এমনকি ছবিও তোলা নিষিদ্ধ।

কিন্তু এরকম এরা কেন করে? নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে। চল কারণগুলো জেনে নিই।

এটা সাধারণ মানুষকে একটা নাকি বড় এবং মহৎ শিক্ষা দেয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ যেন মৃত্যু ও জীবনের ক্ষণস্থায়ী অবস্থার বিষয়ে সচেতন হতে পারে। তারা বিশ্বাস করে যে, মানুষের শরীর হচ্ছে আত্মার ধারক। মৃত্যুর পর সেই ধারককে ছেড়ে আত্মা চলে যায়। ছেড়ে দেয় এইজন্য যে, যাতে সেই আত্মা অন্য কোথাও অন্য কোনো দেহে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে। এজন্য মৃতদেহগুলোকে ফেলে রাখা হয়, যেন শকুনেরা তা খেতে পারে। তিব্বতিরা শকুনদের চেনে অন্য রুপে। জানো কি রুপে? “ডাকিনিস” রুপে। তাদের মতে “ডাকিনিস” এর অর্থ হলো আকাশের নৃত্যশিল্পী। এরা হচ্ছে দেবদূত। তাদের বিশ্বাস ডাকিনিরা মৃতদেহের আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে। আবার এতে জীবের প্রতি দয়াও দেখানো হয়। কারণ, অভুক্ত শকুনদের মৃতদেহ ভক্ষণ করতে দেয় তারা। 

কিন্তু বন্ধুরা, তোমাদের কি মত? এটাকি তাদের করা উচিত? তাদের ক্ষেত্রে হয়তো তারা সেটা ধর্মীয় আচার বলে জানে। কিন্তু অন্যরা এটাকে কি ভালো চোখে দেখবে? সর্বোপরি তোমাদের এই প্রথা নিয়ে কি মতামত আছে, তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।

ধন্যবাদ সকলকে।

তথ্যসূত্রঃ itibritto.com

ইমেইজ ক্রেডিটঃ pexels.com

ইমেইজ ডিজাইনঃ canva.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ